রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন

দুশ্চিন্তায় কৃষকের মুখে হাসি নেই

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ খাদ্যে উদ্বৃত্ত কিশোরগঞ্জের হাওরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সোনা রঙের ধানের শীষ হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। চাষিরা পুরোদমে শুরু করেছেন ধান কাটা, মাড়াইয়ের কাজ। তবে করোনার কারণে শ্রমিক সংকট ও বন্যার আশঙ্কায় পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাসি নেই কৃষকের মুখে।

৪ এপ্রিল টানা সাড়ে ৪ ঘণ্টার ‘লু’ হাওয়ায় জেলার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার সঙ্গে করোনার কারণে দেখা দিয়েছে মৌসুমি কৃষি শ্রমিক সংকট।

সর্বশেষ শনিবার (১৭ এপ্রিল) আবহাওয়া অধিদফতর প্রকাশিত এক বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পূর্ব হাওর অঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনার কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। এতে করে সুরমা, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে হাওরের নিচু এলাকার বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। তাই সময়মতো ধানকাটা শেষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেণ কিশোরগঞ্জের হাওরের কৃষকরা।

জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের মাত্র ৩০ ভাগ জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৭০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে অতি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

অতিবৃষ্টিতে হাওরের নিচু জমিতে পানি উঠতে পারে। এ পরিস্থিতিতে হাওরের কৃষকদের নিচু জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া পাওয়ার থ্রেসার ছাড়াও ১০৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২০টি রিপার মেশিন নিয়ে হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটা হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, আগাম পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ফসলের ক্ষতিরোধে এবার কিশোরগঞ্জের সাতটি হাওর উপজেলায় ৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৩ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ইতোমধ্যে জেলার ইটনায় ২৪ দশমিক ১৩ কিলোমিটার, মিঠামইনে ৩ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার, অষ্টগ্রামে ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার, নিকলীতে ১৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার, ভৈরবে ১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, তাড়াইলে ২ দশমিক ১১৬ কিলোমিটার ও করিমগঞ্জে ০ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া সতর্কবাণী অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত আসাম ও মেঘালয়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হবে। ফলে হাওরের নিচু এলাকার আধা পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় হাওরের পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলতে জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগকে জানানো হয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেও আগাম বন্যা হবে না বলে মনে করেন কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামারবাড়ী) উপ-পরিচালক মো. সাইফুল আলম জানান, খাদ্যে উদ্বৃত্ত কিশোরগঞ্জ জেলার জন্য চলতি বছর সরকার ৭০ পার্সেন্ট ভর্তুকি মূল্যে এবং কিস্তিতে ১০০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ৯০টি রিপারের বরাদ্দ দেয়। এরই মধ্যে ৮৬টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার কেনা হয়েছে। এর আগে, গত বছর ৪৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর ও ২৩টি রিপার সরবরাহ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ বছর এ জেলার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com